দুধ সব বয়সের মানুষের জন্য ভীষণ উপকারী।
২০০১ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ১ জুনকে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।
দুধের মধ্যে ভিটামিন সি ছাড়া রয়েছে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান।
দুধের উপকারিতা সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের সাবেক প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান (চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান) পুষ্টিবিদ অধ্যাপক আখতারুন্নাহার আলো বলেন, দুধ হলো ক্যালসিয়ামের খুব ভালো একটি উৎস। আর ক্যালসিয়াম সব বয়সের মানুষের জন্য জরুরি উপাদান।
মানবজীবনের শুরু হয় দুধ দিয়ে। শিশু–কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের জন্য দুধ ভীষণ প্রয়োজনীয় খাবার। যেসব শিশু জন্মের পর ঠিকভাবে দুধ খেতে পায় না, তারা অধিকাংশ সময় কোয়াশিয়রকর (kwashiorkor), ম্যারাসমাস (Marasmus) নামক অপুষ্টিজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়।
আর দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের অভাবে বয়স্ক ব্যক্তিরা অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস অর্থাৎ হাড়ের দুর্বলতা ও হাড়ের ভঙ্গুরতাজনিত অসুখে আক্রান্ত হন।
গর্ভাবস্থা এবং মাতৃদুগ্ধ দানকালে প্রত্যেক মায়ের অবশ্যই দুধ খাওয়া উচিত।
আমাদের সমাজে দেখা যায়, মায়েরা নিজেরা দুধ না খেয়ে বাসার অন্যদের খেতে দেন।
গর্ভাবস্থা ও মাতৃদুগ্ধদানকালে প্রত্যেক নারীর প্রতিদিন অন্তত এক কাপ দুধ খাওয়া উচিত। সব বয়সের মানুষকেই দুধ খেতে হবে। যাঁরা দুধ হজম করতে পারেন না, তাঁদের উচিত দুধ দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া। যেমন দুধ দিয়ে তৈরি সেমাই, পুডিং, পায়েস, দুধসুজি, দুধভাত, দুধমুড়ি, দই, ঘোল, পনির ইত্যাদি।
দুধ ভিটামিন ডি র ভালো একটি উৎস। ভিটামিন ডি হাড়, দাঁত, চুল, নখ ও ত্বকে পুষ্টি জোগায়। রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া দুধে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন এ, বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ, আয়োডিন, পটাশিয়াম, ফোলেট, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি (সিক্স, টুয়েলভ), জিংক, চিনি, ফ্যাট ও ক্যালরি।
ভিটামিন এ সব বয়সের মানুষের চোখের জন্য উপকারী। দুধের মধ্যে রয়েছে ফোলেট, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।
রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে গড়ে তোলে প্রতিরোধ শক্তি।
আয়োডিন আমাদের হরমোনজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ভিটামিন বি বেরিবেরি অসুখ, মুখের ঘা, ঠোঁটের কোণায় ঘা প্রতিরোধ করে, স্নায়ুকে রাখে কর্মক্ষম।
দুধের মধ্যে যে ফ্যাট রয়েছে, তা আমাদের ত্বকের চুলের মসৃণতা বাড়ায়।
তবে যাঁরা ওজন কমাতে চান বা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের রোগী, তাঁরা ফ্যাটফ্রি দুধ খাবেন।
দুধের মধ্যে রয়েছে গ্লুটাথিয়ন (Glutathione) নামক একধরনের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন (Serotonin) নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
সেরোটোনিন আমাদের মন ভালো রাখে, নিদ্রাহীনতা দূর করে এবং খাবারে রুচি বাড়িয়ে কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।
ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা